
মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর নিপীড়নের শিকার হয়ে যেসব রোহিঙ্গা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন তাদেরকে ‘শরণার্থী’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বরাবরই আপত্তি জানিয়ে আসছে সরকার।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া এসব রোহিঙ্গা ‘শরণার্থী’ নয় বরং তারা “বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক”।
শরণার্থী-বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন যে, রোহিঙ্গারা শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য এবং তাদের সেটি দেয়া উচিত। কারণ আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইন অনুসারে তো বটেই, রোহিঙ্গাদের ‘শরণার্থী’ ঘোষণা না করে বরং অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতির মুখে পড়ছে সরকার।
আবার অনেকেই দ্বিমত প্রকাশ করে বলছেন যে, রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানোর সুবিধার জন্য এটি বাংলাদেশের একটি সঠিক সিদ্ধান্ত।
এদিকে, বাংলাদেশে যে ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা আছে, সামনের দিনগুলোতে বিপুল পরিমাণ এই জনগোষ্ঠীর ব্যবস্থাপনার খরচ কীভাবে আসবে – তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়।
জানানো হচ্ছে যে, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে দাতা দেশগুলোর কাছে সহায়তা চাইবে – যার পরিমাণ প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার।
শরণার্থী কারা?
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কনভেনশনের আর্টিকেল ১ অনুযায়ী, শরণার্থী হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি তার নিজ বর্ণ, ধর্ম, জাতীয়তা, কোন নির্দিষ্ট গ্রুপের সদস্য হওয়া কিংবা রাজনৈতিক মতাদর্শের জন্য নিজ দেশে প্রাণনাশের হুমকির কারণে সেখানে ফিরে যেতে পারছে না কিংবা যেতে চায় না।
জাতিসংঘের হিসাবে, ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে শরণার্থী মানুষের সংখ্যা ছিল ২৫.৪ মিলিয়নের মতো।
মিয়ানমারে ২০১৭ সালে রাখাইন প্রদেশে সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতন শুরু হলে প্রায় সাড়ে সাত লাখের মতো রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আর আগে বিভিন্ন সময়ে আরো প্রায় তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। বর্তমানে দেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখের মতো যারা কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরে বসবাস করছে।
এরমধ্যে বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়অ হয়নি। ২০২১ সালে মিয়ানমারে সেনা অভ্যূত্থানের পর পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। এ কারণে খুব শিগগির এই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সি আর আবরার বলেন, ১৯৯২ সালের আগে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে তাদেরকে শরণার্থী হিসেবে হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল।
ওই শরণার্থীদের দেখভাল করার জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই সময়ে প্রায় ৩২ হাজারের মতো শরণার্থী বাংলাদেশে থেকে যায়।
মি. আবরার বলেন, এখনো রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা শরণার্থী স্বীকৃতি নিয়েই শিবিরে বসবাস করছেন।
তবে ১৯৯২ সালের পর থেকে যেসব রোহিঙ্গা সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে এসেছে তাদেরকে আর শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। তাদেরকে বলা হচ্ছে, ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক।’
স্বীকৃতি পেলে রোহিঙ্গাদের লাভ কী?
জাতিসংঘ ১৯৫১ সালে শরণার্থী বিষয়ক যে কনভেনশন অনুমোদন করে – সেখানে ‘শরণার্থী’র সংজ্ঞা দেয়া ছাড়াও তাদের প্রাপ্য সুযোগসুবিধার নানা দিক বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, কোন শরণার্থীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউ জোর করে এমন কোন ভূখণ্ডে ফেরত পাঠাতে পারবে না যেখানে তার প্রাণনাশ বা স্বাধীনতা হরণের ভয় আছে বলে সে মনে করে।
আর যারা শরণার্থী, তারা নিজ দেশ ছেড়ে গিয়ে যে দেশে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদেরকে যদি সেই দেশ শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে তার মৌলিক সব চাহিদাও সংশ্লিষ্ট ওই দেশকেই নিশ্চিত করতে হবে।
এই কনভেনশন অনুযায়ী, এই চাহিদার মধ্যে রয়েছে বিচার পাওয়ার ব্যবস্থা করা, প্রাথমিক শিক্ষা, কাজের সুযোগ, এবং প্রয়োজনীয় নথি পূরণের সুযোগ – যার মধ্যে রয়েছে পাসপোর্টের ফর্ম পূরণ করার মতো বিষয়ও।
অর্থাৎ একজন শরণার্থী যে দেশে আশ্রয় নিয়েছেন সেখানকার বিচার ব্যবস্থায় ওই দেশের সাধারণ নাগরিকদের মতোই বিচার পাওয়ার অধিকার রাখে।
একই সাথে তার ভ্রমণ নিশ্চিত করার মতো সব নথিও সংশ্লিষ্ট দেশকে সরবরাহ করার কথা বলা হয়েছে কনভেনশনে।
শরণার্থী তার আশ্রয়দানকারী দেশের শ্রম বাজারে মজুরিভিত্তিক কাজে অংশ নিতে পারবে। জাতীয় শ্রম বাজারে ওই দেশের নাগরিকদের জন্য চাকরীর সুযোগ নিশ্চিত করতে বিদেশী নাগরিকদের চাকরী পাওয়ারে ক্ষেত্রে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, শরণার্থীদের উপর সেই বিধিনিষেধ থাকবে না – যদি সে এরইমধ্যে তিন বছরের বেশি সময় সেই দেশে পার করে থাকে, বা তার স্বামী বা স্ত্রী যদি ওই দেশের নাগরিক হয়, বা তার যদি এমন এক বা একাধিক সন্তান থাকে যারা ওই দেশের নাগরিক। এমনকি, ওই স্বামী-স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদের পরও এমন সুবিধা পাবেন শরণার্থী ব্যক্তি।
এছাড়া রেশন, শিক্ষা, ত্রাণ ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও সাধারণ নাগরিকদের মতোই সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে শরণার্থী ব্যক্তির।
স্বীকৃতি না দেয়ার মূল কারণ বলে মনে করেন তিনি।
এর আগে সরকারের পক্ষ থেকেও বারবার এই বিষয়টিকে সামনে এনেই রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি না দেয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছে সরকার।
মি. ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গারা যদি বলে যে মিয়ানমার তাদেরকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়া পর্যন্ত তারা ফেরত যাবে না, তখন সেটি মেনে নেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না সরকারের হাতে।
“যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের ভলান্টারি কনসেন্ট পাওয়া যাবে না, ততক্ষণ বাংলাদেশ (ফেরত পাঠাতে) পারবে না।”
সাবেক এই কুটনীতিক বলেন, এর আগে যেসব প্রত্যাবাসন হয়েছে তখন রোহিঙ্গারা আসলে কোন শর্ত দিতে পারেনি। কারণ বাংলাদেশ তাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় নি বলে।
মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার জন্য তাদেরকে বিতাড়িত করেনি, সে বিষয়টি মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে উল্লেখ করে মি. ইসলাম বলেন, “ফেরত নেয়ার ইচ্ছা থাকলে মিয়ানমার গ্রামের পর গ্রাম ডেমোলিশ (ধ্বংস) করতো না।”অন্যদিকে যে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়াটা দরকার তারা বলছেন যে, ২০১৭ সালের পর যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন তারা গণহত্যা থেকে বাঁচতেই বাংলাদেশে এসেছেন। ফলে তারা শরণার্থী হওয়ার যে শর্ত সেটি পূরণ করেন এবং তারা এই স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য।
মি. আবরার বলেন, “শরণার্থী হিসেবে যদি কেউ যোগ্যতা অর্জন করে থাকেন তাহলে তারা অনেক বেশি যোগ্য”।
রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো কঠিন হওয়ার যে কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সেটি খুব একটা যৌক্তিক নয় বলেও মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হোক আর না হোক, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে, কোন ব্যক্তির তার নিজ দেশে প্রাণনাশ বা নিগ্রহের স্বীকার হওয়ার শঙ্কা থাকলে তাকে ফেরত পাঠানো যায় না।
“কাজেই এটা খুব একটা শক্ত যুক্তি বলে আমরা মনে করি না। ”
বরং এই বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে, রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে তাদেরকে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দাবি উত্থাপন আরো বেশি জোরালো হবে।
কারণ শরণার্থী শুধু আশ্রয়দানকারী দেশের দায়িত্ব নয় বরং দায়িত্ব তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর গড়ায়। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের দেখভালের জন্য যে রেশন কমে আসছে, সেগুলো জোগাড়েও এই বিষয়টি আরো শক্ত ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি। সুত্র: বিবিসি
ঘটনাপ্রবাহঃ জাতিসংঘ
পাঁচ মাসে দেড় শ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি
১৬/০৪/২০২৫ ১০:২৯ এএমমিয়ানমারে আবারো ভূমিকম্প
১৩/০৪/২০২৫ ৩:০৬ পিএমরোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা নেই সহসা
১৩/০৪/২০২৫ ১০:৩২ এএমক্যাম্প প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ত্রাণপণ্য বিক্রি করছে রোহিঙ্গারা
০৭/১২/২০২৪ ১০:০০ এএমদেশে বড় সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা, সীমান্তে সতর্ক বিজিবি
০৫/১২/২০২৪ ৯:৩০ এএমমিয়ানমারে জান্তার ড্রোন হামলায় নিহত ৩২
১০/১০/২০২৩ ৪:১৯ পিএমরোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলিতে নিহত ২
০৯/১০/২০২৩ ১২:০৬ পিএমদুর্নীতির মামলায় সু চির আপিল খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট
০৯/১০/২০২৩ ৯:৪৯ এএমরোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্র ও মাদক ঠেকাতে অভিযান জোরদার
০৮/১০/২০২৩ ৭:৪২ এএমশিবির ছেড়ে ভাড়া বাসায় থাকছেন রোহিঙ্গা নেতারা
১২/০৪/২০২৩ ১০:৩৩ এএমমিয়ানমারে ফের ভয়াবহ সংঘর্ষ, পালাচ্ছেন হাজার হাজার বাসিন্দা
০৭/০৪/২০২৩ ১২:১২ পিএমমিয়ানমারে নির্বাচন বিলম্বের ইঙ্গিত জান্তা সরকারের
১০/০৩/২০২৩ ৩:১০ পিএমরোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে অশান্তির মূলে কি নবী হোসেন
০৮/০৩/২০২৩ ৯:৩৫ এএমউখিয়া ক্যাম্পে দুর্বৃত্তের গুলিতে রোহিঙ্গা নেতা খুন
০৭/০৩/২০২৩ ৯:২০ এএমভয় দেখিয়ে ক্যাম্পে আগুন দেয় সন্ত্রাসীরা
০৭/০৩/২০২৩ ৭:৩০ এএমরোহিঙ্গা ক্যাম্পের আগুন দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত?
০৬/০৩/২০২৩ ৮:০৯ এএমউখিয়ার ক্যাম্পে আগুন নাশকতা কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে
০৫/০৩/২০২৩ ১০:১২ পিএমআগুনে ঘরছাড়া ১২ হাজার রোহিঙ্গা, আটক -১
০৫/০৩/২০২৩ ৯:০০ পিএমউখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন নিয়ন্ত্রনে
০৫/০৩/২০২৩ ৬:৪৮ পিএমরোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনীও
০৫/০৩/২০২৩ ৬:২৫ পিএম
পাঠকের মতামত